-
Notifications
You must be signed in to change notification settings - Fork 6
/
Input1.txt
2 lines (2 loc) · 11 KB
/
Input1.txt
1
2
তাঁর নামটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ব্রাজিল দলের রক্ষণভাগে ডান প্রান্ত দিয়ে এক অক্লান্ত ফুটবলারের সমানতালে রক্ষণ ও আক্রমণ । খেলেছেন ব্রাজিলের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ । কপালে একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে টানা তিন বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলার গৌরবতিলক । তিনি মার্কোস ইভানগেলিস্তা দি মোরাইস । চিনতে পারলেন না বুঝি ? ফুটবলবিশ্ব অবশ্য তাঁকে কাফু নামেই চেনে । রাশিয়া বিশ্বকাপের প্রাক্কালে বিশ্বজয়ী সাবেক এই রাইটব্যাকের কাঁধে ব্রাজিলের সর্বকালের সেরা একাদশ নির্বাচনের গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেছিল ইংলিশ সংবাদমাধ্যম 'দ্য গার্ডিয়ান' । ভীষণ কঠিন এই কাজটা করতে গিয়ে কাফু কাকে কাকে রেখেছেন তাঁর ব্রাজিল একাদশে ? কাকেই বা বাদ দিয়েছেন ? আসুন জেনে নেই—
৪-৪-২ ছকে কাফু যে একাদশ গঠন করেছেন, তাঁর ভাষায় সবাই অতি-আক্রমণাত্মক । 'আমরা হয়তো এই স্কোয়াড খেলালে অনেক গোল খাব, কিন্তু এটাও নিশ্চিত, গোল দিতে পারব তার থেকেও বেশি!'—নিজের একাদশ নিয়ে কাফুর ব্যাখ্যা! গোলরক্ষক হিসেবে কাফুর একাদশে স্থান করে নিয়েছেন ক্লদিও তাফারেল । 'সেলেসাও' গোলপোস্টের নিচে সবচেয়ে বেশি (১০১) ম্যাচ খেলা সাবেক গোলরক্ষক । ১৯৯০, ১৯৯৪ ও ১৯৯৮—তিনটি বিশ্বকাপ খেলা তাফারেলকে দলে রাখতে গিয়ে কাফু বাদ দিয়েছেন একসময়ের সতীর্থ দিদা, ১৯৫৮ ও ১৯৬২ সালের বিশ্বকাপজয়ী গোলরক্ষক জিলমার এবং ১৯৭০ বিশ্বকাপের এমারসন লিয়াওকে । তাফারেলের অন্তর্ভুক্তি প্রসঙ্গে কাফুর ব্যাখ্যা, মাঠে সে আহামরি কিছু করতে চাইত না, এতে বলটা তাঁর নিয়ন্ত্রনেই থাকত। পেছন থেকে ঠান্ডা মাথায় নির্দেশনা দিয়ে যেত সতীর্থদের । চারজনের রক্ষণভাগে রাইটব্যাক হিসেবে কাফু নিজেকে বিবেচনা করেননি । বেছে নিয়েছেন, বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বকালের অন্যতম সেরা দল হিসেবে খ্যাত '৭০-এর ব্রাজিল দলের অধিনায়ক—কার্লোস আলবার্তো তোরেসকে । সেই বিশ্বকাপের ফাইনালে পেলের পাস থেকেবুলেট গতির শটে অনিন্দ্যসুন্দর একটি গোল করেছিলেন আলবার্তো । বল পায়েও ছিলেন অনেক কুশলী একজন ফুটবলার । যদিও তাঁর অধিনায়ক ('ক্যাপিতা') পরিচয়ের আড়ালে তা প্রায়ই ঢাকা পড়ে যায় । সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ডিফেন্ডারকে জায়গা দিতে কাফু বাদ দিয়েছেন সর্বকালের অন্যতম সেরা রাইটব্যাককে! তিনি ১৯৫৪, ১৯৫৮ ও ১৯৬২ বিশ্বকাপে খেলা দালমা সান্তোস । লেফটব্যাক হিসেবে কাফু বেছে নিয়েছেন তাঁর দীর্ঘদিনের সতীর্থ রবার্তো কার্লোসকে । 'দ্য বুলেট ম্যান'কে বেছে নিতে গিয়ে কাফু জায়গা দিতে পারেননি ফুটবলীয় বুদ্ধিমত্তার জন্য পেলে-ভাভাদের কাছে 'এনসাইক্লোপিডিয়া' তকমা পাওয়া নিল্টন সান্তোসকে । কাফুর এই দুই সেন্টারব্যাক—আলদাইর আর লুসিও । এএস রোমার 'হল অব ফেম'-এ জায়গা পাওয়া আলদাইরের সঙ্গে এই ক্লাবে সতীর্থ ছিলেন কাফু । পরে তাঁকে ব্রাজিল দলেও পেয়েছেন সতীর্থ হিসেবে । কাফুর ভাষ্য, আক্রমণ করতে গিয়ে মাঝেমধ্যে রক্ষণ ঠেকাতে খেই হারিয়ে ফেললে এই আলদাইরই বিপদমুক্ত করতেন তাঁকে, ব্রাজিলকে! কখনো বাজে কোনো ট্যাকল করতেন না, ছিল সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় থাকার দুর্দান্ত ক্ষমতা । অন্যদিকে লুসিও ছিলেন অপেক্ষাকৃত আক্রমণাত্মক ডিফেন্ডার । উচ্চতার জন্য বাতাসে যেমন দক্ষ ছিলেন, তেমনি বল পায়ে চকিত দৌড়ে হঠাৎ করেই ঢুকে পড়তেন প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগে । ড্রিবলিংয়েও পারঙ্গম 'দ্য হর্স' তকমা পাওয়া লুসিও এবং আলদাইর জুটি ব্রাজিলের হয়ে বেশ ভালো করত বলে কাফুর ধারণা । চারজন মিডফিল্ডারের মধ্যে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে কাফু তাঁর একাদশে রেখেছেন ১৯৮২ বিশ্বকাপ দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় ফ্যালকাওকে । কাফুর মতে, ফ্যালকাও কখনো ভুল পাস দিতেন না এবং সব সময়েই দলের ফরোয়ার্ডদের গোলে কোন না কোনোভাবে সহায়তা করতেন । তাঁকে রাখতে গিয়ে বেশ কজন কিংবদন্তি খেলোয়াড়কে বাদ দিতে হয়েছে কাফুকে—কথাটা তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন । এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, ১৯৫৮ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের মিডফিল্ড-মস্তিষ্ক জিতো, ১৯৯৪-এর বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক দুঙ্গা এবং সত্তরের সেই দলের ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ক্লদোয়ালদো । আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার ও উইঙ্গার হিসেবে কাফু তাঁর দলে জায়গা দিয়েছেন 'ইলাস্টিকো ড্রিবলিং কে নিখুঁত করে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা রিভেলিনোকে । সঙ্গে তাঁর বহুদিনের সতীর্থ রিভালদো এবং 'সাদা পেলে' নামে খ্যাত জিকো । তাঁদের জায়গা দিতে কাফুর একাদশে স্থান হয়নি ৮২ বিশ্বকাপে ব্রাজিল দলে 'দার্শনিক'খ্যাত সক্রেটিস ও পেলের নায়ক—দিদির । বল নিয়ে রিভেলিনো আর জিকো আশ্চর্য সব কারিকুরি দেখাতে পারতেন । ইতিহাসের সেরা 'ড্রিবলার' হিসেবে এই রিভেলিনোকেই মানেন কাফু । ওদিকে রিভালদো আর ফ্যালকাওয়ের খেলার ধরন অনেকটা একই রকম ছিল । জিকো ছিলেন ফ্রি-কিকের জাদুকর । বক্সের আশপাশে ফাউল হলে জিকোর থেকে খুশি খুব সম্ভবত আর কেউই হতেন না! আর মাঠে রিভেলিনো, রিভালদো, জিকো আর ফ্যালকাও একসঙ্গে থাকলে ব্রাজিলকে বল হারানোর ভয় পেতে হতো না, কাফু এ ব্যাপারে নিশ্চিত ! ব্রাজিলের এই একাদশে কোচ হিসেবে কাফু নির্বাচন করেছেন ১৯৫৮ সালে খেলোয়াড় হিসেবে ও ১৯৭০ সালে কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জেতা মারিও জাগালোকে । আর হ্যাঁ, দলের দুই স্ট্রাইকার হিসেবে কাফুর পছন্দ পেলে আর রোনালদো । নিজ নিজ প্রজন্মে ব্রাজিল দলের এই দুই মূল খেলোয়াড় সমন্ধে কিছু বলার দরকার আছে কি ?